:
ব্রেকিং নিউজ

৫৮ বছর পর মুসলমানদের কলংক ঘুচলো ইরান!!

top-news


ইসরায়েলের সাথে সঙ্গে ছয় দিনের যুদ্ধে নাস্তানাবুদ হয়েছিল আরব দেশগুলো—অর্থাৎ সিরিয়া, মিশর ও জর্ডান। সেটা ঘটেছিল ১৯৬৭ সালের জুনে।
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশগুলোর সহায়তায় গত প্রায় ছয় দশকে মধ্যপ্রাচ্যে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা ইসরায়েল ক্রমাগত আঘাত করেও সামরিক দিক থেকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ইরানকে 'ধরাশায়ী' করতে পারেনি। অন্যদিকে ইসরায়েলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে ক্রমাগত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইরান।

ব্রিটানিকার তথ্য বলছে—ছয় দিনের তৃতীয় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৯৬৭ সালের ৫ জুন। তা স্থায়ী হয়েছিল ১০ জুন পর্যন্ত। এই যুদ্ধের মাধ্যমে ইসরায়েল প্রতিবেশী মিশরের সিনাই ও গাজা উপত্যকা, জর্ডানের পশ্চিম তীর ও জেরুসালেম ও সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখল করে নেয়। এসব অঞ্চলকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরায়েল অধিকৃত ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে।

এতে আরও বলা হয়, ১৯৬৭ সালের শুরুতে সিরিয়া গোলান মালভূমি থেকে ইসরায়েলি গ্রামগুলোয় বোমা ফেলে। সেসময় ইসরায়েলি বিমান বাহিনী সিরিয়ার ছয়টি মিগ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে। মিশর সিনাই উপত্যকায় সেনা মোতায়েন করে।

সে বছরের মে মাসে মিশর জর্ডানের সঙ্গে যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি করলে ইসরায়েল মিশরের বিমান বাহিনীকে ধ্বংস করে দেয়। মিশরের হাত থেকে সিনাই ও গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেয় ইসরায়েল।

এরপর সিরিয়াকে গোলান মালভূমি থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর ইসরায়েলি বাহিনী জর্ডানের কাছ থেকে পশ্চিম তীর ও জেরুসালেম দখল করে।
এরপর, সেই আরব দেশগুলোর মধ্যে মিশর ও জর্ডান নিজেদের পরাজয় মেনে নিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে।

এরপর ফিলিস্তিনিদের ওপর নেমে আসে নিপীড়নের খড়গ।

এদিকে, ইরানের সশস্ত্র বাহিনী সম্প্রতি ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুতে একাধিক পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তবে ইরানের তাসনিম নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইরান এখনো তার নতুন প্রজন্মের বা অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেনি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গত ১৩ জুন ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসী যুদ্ধ শুরু করে। তারা ইরানের পরমাণু, সামরিক ও আবাসিক স্থাপনাগুলোর ওপর বিমান হামলা চালায়। এতে অনেক উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানী ও সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়।

এ ঘটনার পরপরই ইরানের সামরিক বাহিনী পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। ১৯ জুন পর্যন্ত 'অপারেশন ট্রু প্রমিস থ্রি'-এর অংশ হিসেবে ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ডস কর্পস (আইআরজিসি) ইসরায়েলের ওপর ১৩ দফা পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।

তাসনিম নিউজ এজেন্সি বলছে, সামরিক বিশ্লেষকেরা ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করেছেন, যা ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা কৌশলকে প্রায় অকেজো করে তুলেছে। এগুলোর মধ্যে আছে—ইরান দিনে ও রাতে, উভয় সময়েই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। এতে সময় ঠিক করতে ইসরায়েল তার প্রতিরক্ষার সংগঠিত কৌশল গঠনে ব্যর্থ হচ্ছে। ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও আত্মঘাতী ড্রোনসহ বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করেছে। ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিভিন্ন ধরণের ও অনিয়মিত রণকৌশল প্রয়োগ করেছে, এতে আগাম পূর্বাভাস দিতে পারছে না ইসরায়েল। ইরান ইসরায়েলের বিভিন্ন জায়গায় একযোগে হামলা চালিয়ে তাদের চমকে দিচ্ছে। ইরানের কাছে বিশাল ডেটাবেস আছে। এতে ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটি, তেল শোধনাগার, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোসহ নানা লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো সম্ভব হচ্ছে।

এছাড়া ইরান এখনো অনেক অত্যাধুনিক দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রকাশ করেনি, তাই ইসরায়েলের জন্য একের পর এক চমক আসতে থাকবে বলে জানিয়েছে তাসনিম নিউজ।

ইরান এখন পর্যন্ত কী ব্যবহার করেছে ও করেনি?


ইরানের কাদর ও এমাদ ক্ষেপণাস্ত্র একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। উভয়ের পাল্লা প্রায় ১ হাজার ৮০০ কিলোমিটার, এবং এরা প্রায় ৭৫০ কেজি ওজনের ওয়ারহেড বহন করতে পারে—যদিও পুরোটা বিস্ফোরক নয়। ধারণা করা হয় এমাদ ক্ষেপণাস্ত্র কাদরের তুলনায় বেশি নিখুঁতভাবে লক্ষ্যভেদ করতে সক্ষম। ২০২৩ সালে 'ট্রু প্রমিস' অভিযানের সময় এই ক্ষেপণাস্ত্র দু'টি ব্যবহৃত হয়েছিল।

খাইবার শেকান হচ্ছে ইরানের একটি নতুন প্রজন্মের সলিড-ফুয়েল ক্ষেপণাস্ত্র। এর পাল্লা তুলনামূলকভাবে কম, প্রায় ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার। ফলে এটি কেবল ইরানের পশ্চিমাঞ্চল থেকে ছোড়া হলে ইসরায়েলে পৌঁছাতে পারে। এর ওয়ারহেড ৫০০ থেকে ৬০০ কেজি হলেও, সলিড-প্রোপালশন ব্যবস্থার কারণে এর গতি ও নিখুঁতভাবে হামলার সক্ষমতা বেশি।

দ্য নিউ আরবের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান এখনো ব্যবহার করেনি শহীদ হাজ কাসেম ক্ষেপণাস্ত্র, যার নামকরণ করা হয়েছে কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানির নামে। এটি একটি সলিড-ফুয়েল ক্ষেপণাস্ত্র এবং ইরানের পক্ষ থেকে একে হাইপারসনিক বলা হয়। কারণ এর গতিবেগ শব্দের গতির পাঁচগুণ। তবে পশ্চিমা বিশ্লেষকরা এই 'হাইপারসনিক' ট্যাগ মানতে নারাজ। তাদের যুক্তি, এর ত্রিমাত্রিক চলাচলের সক্ষমতা নেই।

সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ক্ষেপণাস্ত্রে রয়েছে ইলেক্ট্রো-অপটিক্যাল গাইডেন্স ও অত্যন্ত উচ্চ মাত্রার নিখুঁত সক্ষমতা।

ইসরায়েলি গবেষক ইয়েহোশুয়া কালিস্কি দাবি করেন, ১৫ জুন ইরান সম্ভবত এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলের বাত ইয়াম ও রেহোভট শহরের দিকে অন্তত একটি হামলা চালিয়েছে। লক্ষ্যবস্তুগুলোর একটি ছিল সম্ভবত উইজমান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স।

তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো—ইরান এখনো ব্যবহার করেনি ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের ভাষায় 'ডুমসডে অস্ত্র' হিসেবে পরিচিত খোররামশাহর ক্ষেপণাস্ত্র। এটি ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। এর ওয়ারহেড বহনক্ষমতা ১ হাজার ৮০০ কেজি পর্যন্ত। ২০১৭ সালে এটি উন্মোচন করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সামরিক অভিযানে ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।

খোররামশাহর ক্ষেপণাস্ত্র কী করতে পারে?

বিশেষজ্ঞ টাল ইনবার নিউ আরবকে বলেন, যদি একটি খোররামশাহর ক্ষেপণাস্ত্র কোনো প্রধান সড়ক বা ঘনবসতিপূর্ণ নগর এলাকায় আঘাত হানে, তাহলে সেটি উভয় পাশে অবস্থিত ভবনের পুরো ব্লক ধ্বংস করে দিতে পারে।

যদিও ধারণা করা হয় ইরানের হাতে এই ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা কয়েক ডজন থেকে কয়েক শতের মধ্যে সীমাবদ্ধ, তবে তারা কাদর ও এমাদের মতো হাজার হাজার ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণ করে রেখেছে।

ইরানের হাতে কত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আছে?

এর সঠিক সংখ্যা অজানা। ইসরায়েলি সামরিক সূত্রমতে, যুদ্ধের শুরুতে ইরানের হাতে ছিল প্রায় তিন হাজার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এদের মধ্যে ২০০ ছোড়া হয়েছে, কিছু ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধ্বংস হয়েছে। ফলে এখন সংখ্যাটি নেমে এসেছে আনুমানিক দুই হাজারে। তবে এই তথ্য যাচাই করা সম্ভব নয়।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলে পৌঁছাতে কত সময় নেয়?


আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান থেকে ইসরায়েলের দূরত্ব প্রায় ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার। যদি ইরান কোনো মাখ-৫ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে, তাহলে এটি প্রায় ১২ মিনিটে ইসরায়েল পৌঁছাতে পারে। যদিও এই সময় নির্ভর করে ক্ষেপণাস্ত্রের ধরন ও উৎক্ষেপণস্থলের ওপর। (সুত্র: ডেইলি স্টার-বাংলা)

https://www.newspluse24.com/public/uploads/images/manualAds/maanmanualAds02022025_111955_adds.jpg

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *