:
ব্রেকিং নিউজ

ডিটেনশন একটি অকার্যকর পরিত্যক্ত আইন

top-news

কাজী আবদুল হান্নান
২০০৩ সালের ২৮ শেষ জুন উচ্চ আদালত রায়ের মাধ্যমে ঘোষণা করে যে, কোন মহানগর এলাকায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ক্ষমতায় কারো আটকাদেশ স্বাক্ষর করতে পারেন না। বিচারপতি এস কে সিনহা এবং বিচারপতি শরিফ উদ্দিন চাকলাদার  এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষনা করেন।
কারণ হিসেবে বলা হয়, বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(২) ধারা অনুযায়ী এই ডিটেনশন আদেশ দিতে পারেন শুধুমাত্র জেলা বা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। কিন্তু ১৯৮২ সালে ফৌজদারী কার্যবিধি সংশোধন করা হয়। এর সংশোধিত ১০ ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিটি জেলায় মহানগর এলাকার বাইরের জন্য একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত হবেন। আবার ১৮ ধারায় বলা হয়েছে মহানগর এলাকায় থাকবেন মূখ্য মহানগর হাকিম। যারা বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা।
এর মাত্র কিছুদিন আগে অপর এক রায়ে শতাধিক হেভিয়াসকারপাস রিট মামলা নিষ্পত্তি করে আদেশ দেন, ডিটেনশন আদেশ দেয়ার এখতিয়ার নির্বাহী বিভাগের।
ঠট
সৌভাগ্যক্রমে দুটি রায় নিয়েই আমি রিপোর্ট করেছিলাম। গত তিনদিন আমার একাধিক ইমেইল ক্লাউড সার্ভার খোঁজ করে উভয় রিপোর্ট বেরকরেছি। এই পোস্টের নীচে মহানগর এলাকায় ডিটেনশন আদেশ দেয়ার কোন অথরিটি না থাকা বিষয়ক উচ্চ আদালতের রায়ের সেই রিপোর্ট আগ্রহী পাঠকদের জন্য যুক্ত করা হলো।
এই রায়ের পর আইন কমিশন এবং আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে রায় পর্যালোচনা করে সেসময়ের বিএনপি সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা থেকে সরে আসে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পরিপত্র জারি করে আটকাদেশ দেয়ার ফরম জেলায় জেলায় পাঠানো হয়। সেই ফরমের তথ্য যথাযথ না হবার কারণে বিভিন্ন জেলার ডিসি সাহেবদের কৈফিয়ত দিতে হাইকোর্টে ডেকে এনে শাস্তি হিসেবে দাঁড় করিয়ে রাখার ঘটনা ঘটতে থাকে। যে পরিস্থিতিতে জেলাপ্রশাসকদের সম্মেলনে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদের মুখে রাজনৈতিক সরকার মহানগর এলাকার বাইরেও বিশেষ ক্ষমতা আইন সংশোধন না করা পর্যন্ত আটকাদেশের এখতিয়ার প্রয়োগ থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত দেয়। অন্যদিকে মহানগর এলাকায় মূখ্য মহানগর হাকিমকে ডিটেনশন দেয়ার এখতিয়ার দিয়ে আইন সংশোধন করার উদ্যোগ নিতে গিয়ে মাঝপথে তা পরিত্যক্ত হয়। মাজদার হোসেন মামলার রায় অনুযায়ী বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে দিয়ে নির্বাহী প্রশাসনিক আদেশ দেয়ার আইন পাস করা হলে তা বাতিল হয়ে যাবে, বিধায় মহানগর এলাকায় ডিটেনশন দেয়ার এখতিয়ারে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল তা আজ পর্যন্ত রয়ে গেছে। এক এগারোর সেনাসমর্থিত সরকারের সময় আটকাদেশ দিয়ে এক দু'দিনের মধ্যেই সেগুলো সুনির্দিষ্ট মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তার সবগুলোই আটকাদেশ থেকে মামলায় গ্রেফতার দেখানো পর্যন্ত সময়কে "আইন ল'ফুল কনফাইনডমেনট' (বে আইনিভাবে আটক) এবং পরে মামলা দেয়া অসদুদেশ্য মূলক বিবেচনায় উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ হয়। আটকাদেশ আদেশদাতা এবং মামলা দায়েরকারী পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যক্রম গ্রহণের আবেদন করে মরহুম খান সাইফুর রহমান শুনানির উদ্যোগ নেন। সরকারের পক্ষ থেকে ভূকতভোগীদের মুক্তি দিয়ে মামলা ইনফ্রাকচুয়াস (অকার্যকর) হিসেবে বাতিল করানো হয়।
এভাবেই এতদিন বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(২) ধারার ডিটেনশন আদেশ অকার্যকর আইন হিসেবে পরিত্যক্ত হয়ে আছে।
আমার লেখা সেই রিপোর্ট -----
"ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা এবং রাজশাহী মহানগর এলাকায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা অতিরিক্ত জেলাম্যাজিস্ট্রেটদের স্বাক্ষরিত সব আটকাদেশ অবৈধ বলে হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ক্ষমতায় তাদের আটকাদেশ স্বাক্ষর করাকে আদালত এখতিয়ার বহির্ভূত ঘোষনা করে এসব আটকাদেশকে অবৈধ বলে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। ১৯৮২ সালে মহানগর এলাকার বাইরের জন্য জেলা বা অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়োগ করা হলেও দেশের চারটি মহানগর এলাকাতেই জেলাম্যাজিস্ট্রেট অথবা অতিরিক্ত জেলাম্যাজিস্ট্রেট বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(২) ধারা অনুযায়ী আটকাদেশ স্বাক্ষর করে আসছেন।
এই রায়ের ফলে দেশের চারটি মহানগর এলাকার শত শত আটকাদেশ এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে স্বাক্ষর হওয়ায় অবৈধ বলে বিবেচিত হবে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। আইনজীবীরা বলেন, এযাবৎ চার মহানগর এলাকায় যেসব আটকাদেশ দেয়া হয়েছে এর সবই এখতিয়ার বহির্ভূত ভাবে দেয়া হয়েছে বলে রায়টির মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু এই রায়ের সুবিধা নিয়ে বর্তমানে কারাগারে আটক কোন ভিকটিমকে মুক্তি পেতে হলে প্রত্যেককে আদালতের মাধ্যমেই পেতে হবে।
বিচারপতি এস কে সিনহা এবং বিচারপতি শরিফ উদ্দিন চাকলাদার গতকাল এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষনা করেন। রায়ে বলাহয়েছে, ফৌজদারী কার্যবিধির ১০ ধারা অনুযায়ী কোন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা অতিরিক্ত জেলাম্যাজিস্ট্রেটই মহানগর এলাকার মধ্যে কোন আটকাদেশ স্বাক্ষর করার এখতিয়ার রাখেন না। রায়ের অনুলিপি মহানগর এলাকার সকল জেলা প্রশাসকের ব্যক্তিগত নামে ডাক যোগে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মোঃ আনোয়ার হোসেনসহ ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা মহানগর এলাকার মোট ১০জনের পৃথক পৃথক আটকাদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা ১০টি পৃথক হেবিয়াস কার্পাস মামলা একত্রে শুনানী করে আদালত এই রায় দেন। রায়ে মামলা সংশ্লিষ্ট আটক ব্যক্তিদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে নির্দেশ দেয়া হয়।
মামলাটিতে বাদীপক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট এম হাসান শুনানী পরিচালনা করেন। সরকারপক্ষে শুনানী পরিচালনা করেন অতিরিক্ত এটর্নী জেনারেল আবদুর রেজাক খান। তাকে সহায়তা করেন ডেপুটি এটর্নী জেনারেল আবদুর রউফ, সহকারী এটর্নী জেনারেল এ বি এম ওয়ালিউর রহমান খান এবং ফজিলাতুন্নোছা।
রায়টি সম্পর্কে এটর্নী জেনারেল দফতরে ফৌজদারী মামলা পরিচালনা বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত এটর্নী জেনারেল আবদুর রেজাক খান যুগান্তরকে বলেন, ফৌজদারী কার্যবিধির আওতায় জেলাপ্রশাসকদের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(২) ধারা অনুযায়ী জেলা বা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরাই সর্বত্র আটকাদেশ স্বাক্ষর করেন। ৩০ দিনের বেশী হলে সরকার তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় আটকাদেশ দেয়। ১৯৭৬ সালের ঢাকা মহনগর পুলিশ অধ্যাদেশে প্রথম ঢাকা মহানগর এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে অপরাপর মহানগর পুলিশ আইন প্রণয়ন কালে সংশ্লিষ্ট মহানগর এলাকা চিহ্নিত করা হয়।
তিনি বলেন, এর অনেক পরে ১৯৮২ সালে ফৌজদারী কার্যবিধি সংশোধন করা হয়। এর সংশোধিত ১০ ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিটি জেলায় মহানগর এলাকার বাইরের জন্য একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত হবেন। আবার ১৮ ধারায় বলা হয়েছে মহানগর এলাকায় থাকবেন মূখ্য মহানগর হাকিম। কিন্তু মহানগর হাকিম বিচার বিভাগীয় হিসাবে বিচারিক কাজের দয়িত্বে নিযুক্ত হন। কোন প্রশাসনিক দায়িত্ব বা ক্ষমতা তার থাকেনা। এপর্যায়ে এতদিন পরে হলেও এই রায়ের মধ্যদিয়ে একটি শূণ্যতা চিহ্নিত হয়েছে। আদালতের এই রায়ের পর মহানগর এলাকার কোন আটকাদেশ আর জেলা প্রশাসক বা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব প্রাপ্ত জেলা বা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্বাক্ষর করতে পারবেন না। আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন না হওয়া পর্যš� সরকারকেই মহানগর এলাকার আটকাদেশ দিতে হবে।
সরকার পক্ষ আপীল করবে কিনা জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, রায়ের কপি পাওয়ার পর সরকার পর্যালোচনা করে যে নির্দেশ দেবেন এটর্নী জেনারেল দফতর সেভাবেই পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।"

https://www.newspluse24.com/public/uploads/images/manualAds/maanmanualAds02022025_111955_adds.jpg

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *