শুল্ক কর্মকর্তাদের শাটডাউন কর্মসুচি :বন্ধ রাজস্ব আদায়

- ডেস্ক রিপোর্ট:
- 29 Jun, 2025
শুল্ক কর্মকর্তাদের শাটডাউন কর্মসুচির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে দেশের রাজস্ব আদায় । রাজস্ব আদায়ের প্রধান কেন্দ্র চট্টগ্রাম কাষ্টামস হাউজের হয়নি আমদানী-রফতানী পণ্যের শুল্কায়ন। এতে স্থবির হয়ে পড়ে বন্দর কার্যক্রম। পণ্যের শুল্কায়ন না হওয়ায় বন্ধ রয়েছে বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারী।
এদিকে, রফতনী পণ্য নিয়ে শংকায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থান বেড়ে যাওয়ায় আর্ন্তজাতিক নৌবাণিজ্য ব্যবস্থায় বাংলাদেশে ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে মনে করছেন শিপিং ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি বিপুল পরিমান ডেমারেজও গুনতে হবে বলে জানান তারা । এ অবস্থায় দ্রুত সমস্যা সমাধানের তাগিদ দিয়েছে আমদানী-রফতানী প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা।
শাট ডাউন কর্মসুচির কারণে হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকা চট্টগ্রাম কাষ্টমস অনেকটা জনমানব শুন্য ছিল সাপ্তাহের প্রথম দিন রোববার। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে ঝুলছিল তালা। কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির কারণে আমদানী-রফতানী পণ্যের কো শুল্কায়ন হয়নি।
পণ্যেও শুল্কায়ন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরে তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা। বন্দরে দেখা দিয়েছে কন্টেইনার জট। প্রতিদিন যেখানে ৩ থেকে ৪ হাজার কন্টেইনার ডেলিভারী হওয়ার কথা সেখানে রোবাবার ডেলিভারী হয়েছে ১৩৯টি কন্টেইনার। ডেলিভারী হওয়া এসব কন্টেইনার ছিল পূর্বের শুল্কায়ন করা। ফলে বন্দর ইয়ার্ডে জমেছে কন্টেইনারের পাহাড়। রোববার বিকেল পর্যন্ত বন্দর ইয়ার্ডে ছিল ৪০ হাজারের বেশি কন্টেইনার। এছাড়া ১৯ অফ ডকেও তৈরি হেেছ কন্টেইনার জট। এসব কন্টেইনারের অধিকাংশই হচ্ছে তৈরি পোষাক শিল্পের মালিকদের।
কাষ্টসম কর্মকর্তাদের শাটডাউন কর্মসুচির কারণে আমদানী-রফতানী পন্যের শুল্কায়ন বন্ধ রাখার এই ঘটনাকে নজীরবিহীন বলে বলেছেন সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী ইমামুজ্জামনা বিলু। তিনি জানান, ইতিপূর্বে বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেনি। দেশের অর্থনীতির সাথে দ্রুত সমস্যা সমাধানেরও তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
একই কথা বলেন সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম. সাইফুল আলমও। তিনি জানান, এর আগে কাষ্টমস কর্মকর্তাদের কলম বিরতির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার জট তৈরি হয়েছিল। সেই জট সরাতে সিএন্ডএফ কর্মচারীদের অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়েছে। গত বছরের ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পরও বন্দর -কাষ্টমসের কার্যক্রম বন্ধ ছিল না। তিনি এ ঘটনাকে সরকারের ব্যর্থতা হিসাবেও চিহিৃত করেন।
কাষ্টসম কর্মকর্তাদের শাটডাউন কর্মসুচির কারণে রফতানী পন্যের যথা সময়ে জাহাজিকরণ করতে না পারায় শিল্প মালিকরা বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন বলে জানান বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়াডার্স এসোসিয়েশনের সহ সভাপতি খায়রুল আলম সুজন। তিনি জানান, এর ফলে বিশ^ বাণিজ্যের বাংলাদেশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে এবং শিল্প মালিকরা লোকসানে পড়ছেন। বর্হিবিশে^র বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে এবং এর ফলে বিদেশী বিনিয়োগ বাধাগ্রস্থ হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ জানান, কাষ্টসম কর্মকর্তাদের শাট ডাউন কর্মসুচির কারণে শিপিং ব্যবসাও সংকটে পড়বে। আমদানী রফতানী পণ্যের শুল্কায়ন না হওয়ায় বন্দরের জাহাজের গড় অবস্থান বেড়ে যাবে। বাংলাদেশের বন্দরে জাহাজ আসা কমে যাবে এবং নৌবাণিজ্য ধ্বস নামবে।
চ্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী ‘এমভি এক্সপ্রেস নিলওয়ালা’ জাহাজে ১ হাজার ৪৬০টি কন্টেইনার, এমভি হং ডা জিন-৬৮’ এ ১ হাজার ৬৬৬ কন্টেইনার এবং এম ভি এএস সিসিলিয়ায় ৫৬৪ টি কন্টেইনার নিয়ে ইউরোপ-আমেরিকা যাওয়া কথা ছিল। রফতানী পণ্যেও শুলÍায়ন না হওয়ায় সেসব জাহাজ এখন অলস বসে আছে। এসব জাহাজে রফতানী হওয়ার কথা ছিল তৈরি পোষাক। যথাসময়ে পণ্য রফতানী করতে না পারায় বিদেশী
বায়ারাও বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে বলে জানান বন্দর সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি আমদানীকরা পণ্যের খালাস না হওয়ায় বাজারে পণ্যের দাম বাড়বে বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
