:
ব্রেকিং নিউজ

সরকারী অফিস দুনীর্তির স্বর্গরাজ্য! সীমিত হয়েছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা- বিবিএসের জরিপের তথ্য

top-news

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানায়, সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সেবাগ্রহীতারা সর্বাধিক ঘুস-দুর্নীতির শিকার হয়েছেন বিআরটিএতে। সেখানে সেবা নিতে গিয়ে ৬৩ দশমিক ২৯ শতাংশ মানুষ দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। এছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় ৬১ দশমিক ৯৪, পাসপোর্ট অফিসে ৫৭ দশমিক ৪৫ ও ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে ৫৪ দশমিক ৯২ শতাংশ মানুষ সেবা নিতে গিয়ে ঘুস ও দুর্নীতির শিকার হয়েছে।

বাংলাদেশে নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত বলে উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। জরিপে দেখা গেছে, ২৭ দশমিক ২৪ শতাংশ নাগরিক মনে করেন, তারা সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে রাজনৈতিকভাবে মতপ্রকাশ করতে পারেন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য লক্ষণীয়। জরিপ অনুযায়ী, পুরুষদের মধ্যে ৩১ দশমিক ৮৬ ও নারীদের মধ্যে মাত্র ২৩ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ মনে করেন, তারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করেন। তবে শহর ও গ্রামের মধ্যে বড় কোনো পার্থক্য নেই; শহরে এ হার ২৭ দশমিক ৮৭ ও গ্রামে ২৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বা প্রভাব বিস্তারের বিষয়ে আরো কম হার লক্ষ করা যায়। জরিপে অংশগ্রহণকারী মাত্র ২১ দশমিক ৯৯ শতাংশ নাগরিক মনে করেন, তারা দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। এখানেও পুরুষ ও নারীর অংশগ্রহণের মধ্যে বেশ ফারাক রয়েছে। পুরুষ ২৬ দশমিক ৫৫ ও নারী ১৭ দশমিক ৮১ শতাংশ।

গত এক বছরে যেসব নাগরিক সরকারি সেবা নিয়েছেন তাদের মধ্যে ৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ ঘুস-দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৮ দশমিক ৬২ ও নারী ২২ দশমিক ৭১ শতাংশ। গতকাল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সিটিজেন পারসেপশন সার্ভেতে (সিপিএস) এ চিত্র উঠে এসেছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশব্যাপী ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস)’ পরিচালনা করা হয়। ৬৪ জেলার ১ হাজার ৯২০টি প্রাইমারি স্যাম্পলিং ইউনিট থেকে ৪৫ হাজার ৮৮৮টি খানার ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী মোট ৮৪ হাজার ৮০৭ জন নারী-পুরুষ উত্তরদাতার সাক্ষাৎকার নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জরিপে নাগরিকদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিরাপত্তা, সুশাসন, সরকারি সেবার মান, দুর্নীতি, ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার এবং বৈষম্যবিষয়ক এসডিজি ১৬-এর ছয়টি সূচকের অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হয়েছে। বিবিএসের দাবি জরিপের প্রশ্নপত্র জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত আন্তর্জাতিক মান ও পদ্ধতি অনুসরণ করে তৈরি করা হয়েছে।

২০০১ সাল থেকে দেশের সেবা খাতসহ বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান  বলেন, ‘‌প্রকাশিত প্রতিবেদনের হার নিয়ে হয়তো বিতর্ক করা যেতে পারে, কিন্তু প্রতিবেদনে বাস্তবতার প্রতিফলন হয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশে দুর্নীতির চিত্র যে কতটা প্রকট সেটারই বহিঃপ্রকাশ এটা। সরকারি জরিপের তুলনায় আমাদের জরিপে দুর্নীতির হার অনেক বেশি উঠে এসেছে। তার পরও যে বিষয়টি লক্ষণীয়, যে খাতগুলো আমাদের জরিপে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে উঠে আসে, বিবিএসের জরিপেও সে খাতগুলোই সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে উঠে এসেছে। এটা খুব ভালো উদ্যোগ। এ জরিপ অব্যাহত রাখা জরুরি।’

গত দুই বছরে ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনো বিবাদ বা বিরোধের মুখোমুখি হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ নাগরিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আনুষ্ঠানিক অথবা অনানুষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার পেয়েছেন। এর মধ্যে ৪১ দশমিক ৩৪ শতাংশ আনুষ্ঠানিক (আদালত, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ইত্যাদি) প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ও ৬৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক (কমিউনিটি নেতা, আইনজীবী ইত্যাদি) প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেবা পেয়েছেন।

সন্ধ্যার পর নিজ এলাকার আশপাশে একা চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করেন ৮৪ দশমিক ৮১ শতাংশ নাগরিক। বিবিএস জরিপে বলা হয়, নিরাপত্তা বিষয়ে জরিপ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায়, ৮৪ দশমিক ৮১ শতাংশ নাগরিক সন্ধ্যার পর নিজ এলাকার আশপাশে একা চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করেন। তবে পুরুষদের (৮৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ) তুলনায় নারীরা (৮০ দশমিক ৬৭ শতাংশ) কম নিরাপদ বোধ করেন। শহরাঞ্চলের নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তা বোধ (৮৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ) গ্রামীণ এলাকার নাগরিকদের তুলনায় কিছুটা কম (৮৫ দশমিক ৩০ শতাংশ) পরিলক্ষিত হয়।

অন্যদিকে সন্ধ্যার পর নিজ বাড়িতে নাগরিকদের নিরাপত্তা বোধের হার ৯২ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যা নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৯১ দশমিক ৮২ ও ৯৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

সরকারি স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে দেখা যায়, ৪৭ দশমিক ১২ শতাংশ নাগরিক এক বছরের মধ্যে অন্তত একবার সরকারি স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা গ্রহণ করেছেন। সেবা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৮২ দশমিক ৭২ শতাংশ নাগরিকের মতে ওই স্বাস্থ্যসেবা সহজে প্রাপ্তিযোগ্য এবং স্বাস্থ্যসেবার খরচ সামর্থ্যের মধ্যে ছিল মর্মে ৮৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ নাগরিক মতপ্রকাশ করেন। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মান, সেবাগ্রহীতার সঙ্গে আচরণ ও ডাক্তার/স্বাস্থ্যকর্মীদের সময় দেয়ার বিষয়ে সেবা গ্রহণকারীদের সন্তুষ্টির হার যথাক্রমে ৬৫ দশমিক শূন্য ৭, ৬৩ দশমিক ১৩ ও ৬৩ দশমিক ১৯ শতাংশ।

শিক্ষা ক্ষেত্রে দেখা যায়, ৪০ দশমিক ৯৩ শতাংশ নাগরিকের কমপক্ষে একটি শিশু সরকারি প্রাথমিক/মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে। এর মধ্যে ৯৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ নাগরিক প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহজে প্রবেশযোগ্য (যেকোনো ধরনের যানবাহনে বা হেঁটে ৩০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছা যায়) ও ৯২ দশমিক ৬৬ শতাংশ নাগরিক রিপোর্ট করেন যে শিক্ষা ব্যয় সামর্থ্যের মধ্যে ছিল, যেখানে মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ হার যথাক্রমে ৮২ দশমিক ২০ ও ৮০ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

অন্যদিকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান মানসম্মত ছিল মর্মে যথাক্রমে ৬৭ দশমিক ৯৩ ও ৭১ দশমিক ৮৬ শতাংশ নাগরিক মত প্রকাশ করেন। অন্যান্য সরকারি সেবার (পরিচয়পত্র/নাগরিক নিবন্ধন) ক্ষেত্রে দেখা যায়, সেবা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৮ দশমিক ১২ শতাংশ সেবার প্রাপ্যতা ও ৮৬ দশমিক ২৮ শতাংশ সেবাপ্রাপ্তি ব্যয় সামর্থ্যের মধ্যে ছিল মর্মে উল্লেখ করেন।

অন্যদিকে কার্যকর সেবাদান প্রক্রিয়া, সম-আচরণ, সময়মতো সেবাদানে সন্তুষ্টির হার যথাক্রমে ৬২ দশমিক ৬০, ৫৬ দশমিক ২৬ ও ৫১ দশমিক ২৮ শতাংশ।

জরিপে পাওয়া ফলাফল অনুযায়ী, গত এক বছরে দেশের ১৯ দশমিক ৩১ শতাংশ জনগণ কোনো না কোনো ধরনের বৈষম্য বা হয়রানির শিকার হয়েছে। নারীদের মধ্যে এ হার কিছুটা বেশি, ১৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। পুরুষদের মধ্যে এ হার ১৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। শহরাঞ্চলে বৈষম্যের হার (২২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ) গ্রামাঞ্চলের (১৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ) তুলনায় বেশি। এক্ষেত্রে আর্থসামাজিক অবস্থা ও লিঙ্গভেদে বৈষম্য/হয়রানির হার সর্বাধিক। নিজের পরিবারের মধ্যে ৪৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ, গণপরিবহন/উন্মুক্ত স্থানে ৩১ দশমিক ৩০ এবং কর্মস্থলে ২৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ বৈষম্য/হয়রানির ঘটনা সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে মাত্র ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ ভুক্তভোগী এসব ঘটনার বিষয়ে রিপোর্ট করেছেন। (তথ্য সুত্র: দৈনিকবণিক বার্তা)

https://www.newspluse24.com/public/uploads/images/manualAds/maanmanualAds02022025_111955_adds.jpg

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *