চট্টগ্রামে ব্যস্তসময় কাটালেন প্রধান উপদেষ্টা: চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে বললেন সম্ভাবনার কথা

- ডেস্ক রিপোর্ট:
- 14 May, 2025
অর্ন্তবর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়ার প্রায় সাড়ে ৯ মাস পর নিজ এলাকা চট্টগ্রামে এক দিনের সফরে এসে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ১৪মে সকালে চট্টগ্রাম পৌঁছে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে যান এবং সেখানে নির্দেশনামুলক বক্তব্য রাখেন। এরপর প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে কর্ণফুলী নদীর উপর নির্মিতব্য তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর ফলক উন্মোচন করেন।
দুপুরে তিনি যোগ দেন চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে ৫ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রধান উপদেষ্টাকে সম্মানসুচক ডিলিট ডিগ্রী প্রদান করেন। সেখান থেকে নিজ গ্রাম হাটহাজারীর বাথুয়া গ্রামে যান। সেখানে গ্রামবাসীর সাথে মতমিনিময় করেন এবং দাদা-দাদির কবর জেয়ারত করেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে আয়োজিত সভায় যোগ দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরকে 'বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিন্ড’ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'যদি হৃদপিন্ড দুর্বল হয়, কোনো ডাক্তারই তা আর ভালো করতে পারে না। তাই একে বিশ্বমানের করতে হবে।' তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বন্দর ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত বৈশ্বিক পর্যায়ের শীর্ষ সংস্থাগুলোকে আগেও ডাকা হয়েছিল, কিন্তু কার্যকর কোনো অগ্রগতি হয়নি।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশের কর্মসংস্থান তৈরি করতে চট্টগ্রাম বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা অপরিহার্য। এ লক্ষ্য অর্জনে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার বিশ্বের খ্যাতিসম্পন্ন বন্দর ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এটি আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ। সরকারের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বদলাতে হলে চট্টগ্রাম বন্দরই আমাদের আশা। এটি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এই হৃদপিন্ডকে আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। এজন্য আমি নেপাল ও ভারতের সাতটি উত্তর-পূর্ব রাজ্যের (সেভেন সিস্টার্স) কথা বলেছি। যদি তারা এতে যুক্ত হয়, তারা উপকৃত হবে, আমরাও হবো। যারা যুক্ত হবে না, তারা পিছিয়ে পড়বে, বলেন তিনি।
চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে নিজের শৈশবস্মৃতির কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি এই সফরের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। চট্টগ্রাম বন্দর তার জন্য নতুন কিছু নয়; তিনি শৈশব থেকেই এর সঙ্গে পরিচিত। এটি অনেক বদলেছে, তবে পরিবর্তনের গতি ছিল ধীর। সুযোগ পাওয়ার পর থেকেই তিনি ভেবেছেন কী করা যায়।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বিশ্ব অনেক এগিয়ে গেছে, আর আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি। কেউ এ বিষয়ে গুরুত্ব দেয় না। এজন্য তিনি পরিবর্তনের জন্য চাপ দিচ্ছেন এবং বন্দরের পরিচালনার দায়িত্ব বিশ্বের শীর্ষ অপারেটরদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলেছেন। তিনি আশা করেন, একদিন সবাই এর গুরুত্ব বুঝবে।
নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন প্রধান উপদেষ্টার বন্দর উন্নয়নে আগ্রহের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের আশেপাশে একাধিক টার্মিনাল নির্মাণ কনটেইনার জট কমাতে সাহায্য করবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যেই পরিবর্তন দেখা যাবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, বন্দর আধুনিকায়ন করার কোনো বিকল্প নেই। তিনি জানান, বাংলাদেশের ৯২ শতাংশ বৈদেশিক বাণিজ্য এবং তার ৯৮ শতাংশ নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল দিয়ে সম্পন্ন হয়। মুনিরুজ্জামান আরও জানান, প্রাকৃতিক সীমাবদ্ধতার কারণে ২০০ মিটারের বেশি দৈর্র্ঘ্যের জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়তে পারে না। বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, একারণে বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
এদিকে, দুপুরে কালুরঘাট সেতুর নির্মাণকাজের ফলক উন্মোচন করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কালুরঘাট ব্রীজে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে। এই সেতুর ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। এখানে বোয়ালখালী বাসিন্দারাও উপস্থিত আছেন। কালুরঘাট সেতু তাদের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা। এটি নির্মিত হলে চট্টগ্রামবাসীর কষ্টের অবসান হবে।'
দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এ পৃথিবীর ভবিষ্যৎ আমাদের প্রত্যেকের হাতে। আমরা যেভাবে বিশ্বকে গড়তে চাই সেভাবেই বিশ্ব গড়তে পারি। আমি যেভাবে বলেছি সেভাবে গড়তে হবে এমন কোনো কথা নেই। আমি আমার কথাটা বলে যাচ্ছি। অন্যরা তাদেরটা বলবে। কিন্তু নিজের মনের একটা স্বপ্ন থাকতে হবে এটাই আমার আবেদন। আমি কী ধরনের বিশ্ব চাই, কী ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা চাই, কী ধরনের সমাজ চাই, কী ধরনের দেশ চাই-সবকিছু নিয়ে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে একটা স্বপ্ন থাকতে হবে। কিন্তু স্বপ্ন না দেখে গর্তের মধ্যে ঢুকে গেলাম, যা আছে মেনে নিলাম, তাহলে কিছুই পালটাবে না, কিছুই পরিবর্তন হবে না।
দুটি নোবেল পুরস্কার পাবার জন্য চবি গর্ববোধ করতে পারে উল্লেখ করে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ড. ইউনূস বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যখন নিজের পরিচয় দেয়, হয়তো নোবেলের জন্য গৌরববোধ করে। কিন্তু চবির গৌরববোধ করার কারণ দুইটা আছে। পুরো কর্মসূচি, যার জন্য নোবেল পুরস্কার, এর গোড়াপত্তন হয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। একটি তো আমি ব্যক্তিগতভাবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছি। তারপর যে গ্রামীণ ব্যাংক সৃষ্টি হলো, এ ব্যাংকের গোড়াতেও চবি। গ্রামীণ ব্যাংকের আইনে এটা পরিষ্কার লেখা আছে যে, এটা কোথা থেকে আসল? ব্যাংকের জন্ম হয়েছে চবিতে অর্থনীতি বিভাগে, এটা স্পষ্ট উল্লেখ আছে। এ ব্যাংকও নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান। কাজেই দুটি নোবেল পুরস্কারের বিষয় চবি তার ছাত্রছাত্রীদের এর ইতিহাস জানাতে পারে। তাহলে ছাত্রছাত্রীরা ঠিক করবে যে তারা কী ধরনের ভবিষ্যৎ গড়তে চায়।
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
