ঐহিত্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের আজ ৭৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী

- ডেস্ক রিপোর্ট:
- 26 Apr, 2025
দেশের ঐহিত্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের আজ ৭৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। ১৯৫২ সালের ২৬ এপ্রিল সংগঠনটির জন্ম হয়। ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে গড়ে উঠা এই ছাত্র সংগঠনটি শিক্ষা, গনতন্ত্র, সমাজপ্রগতির আন্দোলনে গৌরব উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করছে।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়, ৫৪’র যুক্তফুন্ট নির্বাচন, ৬০দশকে ছাত্র আন্দোলন, হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ছাত্রদের ১১দফার আন্দোলন, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলা ৬৯’র গণঅভ্যূত্থানসহ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে গৌরব উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়ে নিজস্ব গেরিলা বাহিনীও গড়ে তুলে ছিল সংগঠনটি। ৬০’র দশরে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়া, বাঙ্গালী সংস্কৃতির বিকাশসহ চিরায়ত বাঙালী সংস্কৃতি গণমানুষের কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে সংগঠনটি মুল ভূমিকা পালন করে এবং একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্লের বীজ সাধারণ মানুষের মধ্যে বোপন করে।
১৯৭১সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধবিধ্বস্থ বাংলাদেশকে গড়ে তোলাসহ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে ছাত্রদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়াসহ স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলন, সমাজ প্রগতির আন্দোলন, ছাত্র আন্দোলনসহ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সংগঠন্িট অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে সংগঠনটি।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠা বার্ষিতে নিজের অনুভূতির কথা জানিয়েছেন সাবেক ছাত্র নেতারা। সংগঠনটির সাবেক নেতা ডা: আরিফ বাচ্চু বলছেন, আজ ২৬শে এপ্রিল বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সংগ্রামী শুভেচ্ছা।
এই উপমহাদেশে ১৯৪৭ সালের হিন্দু ও মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যে ধর্মীয় বিভক্তির সূত্রপাত হয়েছিল, তা থেকে বেরিয়ে এসে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এই অঞ্চলে যে অসাম্প্রদায়িক বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী চিন্তার সৃষ্টি হয়েছিল তা ধারন করার মত কোন ছাত্র সংগঠন তখন ছিলনা। সেই সময়ের প্রয়োজনেই সৃষ্টি হয় ছাত্র ইউনিয়নের। যা কোন রাজনৈতিক দল কিংবা কোন ব্যক্তির খায়েসে গঠিত হয়নি।
অসাম্প্রদায়িক, বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী অবস্থান থেকেই ছাত্র সমাজের নিজস্ব দাবী আদায়ের সংগ্রাম থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র গেরিলা বাহিনী গঠন করে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে ছাত্র ইউনিয়ন।
ছাত্র সমাজের নিজস্ব দাবী আদায়ের লড়াকু সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন, শোষন বৈষম্য মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছে।
নতুন প্রজন্মকে আহ্বান করছি, ছাত্র ইউনিয়ন এর হাতকে বলিষ্ঠ করুণ, এতে ছাত্র সমাজের লাভ ও এই দেশের লাভ।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন সদস্য হয়েছেন তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি আশোক সাহা। ছাত্রজীবনে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন কালে সরাসরি যুক্তছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের সাথে। সৈ¦রশাসক জেনারেল এরশাদের বিরুদ্ধে ৮৩’র ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বেও ছিলেন। কারাবরণ করেছেন বেশ কয়েক বার। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়ন-চাকসুতে নির্বাচনও করে ছিলেন। ছাত্রইউনিয়নে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতের নিজের অনুভূতির কথা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, ”১৯৭২ এ আমি ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য হই।
খুনোখুনির রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বাংলাদেশে আমার মনে পড়েনা-- ছাত্র ইউনিয়নের কেউ অন্য সংগঠনের বা নিজ সংগঠনের কাউকে কখনো খুন করেছে। পদপদবির জন্য নোংরামি বদমাসি করেছে। কারো রগ বা কব্জি কেটেছে। হকি স্টিক লোহার রড দিয়ে কারো মাথা ফাটিয়েছে। বা কারো পেটে ছোরা ঢুকিয়েছে। কিরিচ মেরেছে বা একে ৪৭ ব্যাবহার করেছে। বা কোন শিক্ষকের সাথে বেয়াদবি করেছে। বা কোন ছাত্রী কে অপমান অসম্মান করেছে।
বরং খুন হয়েছে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা কর্মীরা । চট্টগ্রাম কলেজে শাহাদাত, সঞ্জয় তলাপাত্র সহ দেশের বিভিন্ন স্হানে অনেকে। ছাত্র ইউনিয়নের সভা সমাবেশ করতে দেয়নি বা ভেঙে দিয়েছে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র শিবির। হামলা করেছে। নানারকম অসভ্যতা করেছে।
পেশাগতভাবে সৎ নীতি নিষ্ঠ জীবন ছিল প্রাক্তন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা কর্মীদের।
অতি সামান্য এদিক সেদিক থাকতে পারে হয়তো। এটা স্খলন।
আমি প্রায়ই বলি- ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য হওয়া গৌরবের।
ছাত্র ইউনিয়নের আছে গৌরবের বর্ণাঢ্য সমাচার। রয়েছে লড়াই সংগ্রাম আন্দোলনের গৌরবদীপ্ত ইতিহাস। কিছু করতে পারুক বা না পারুক এই বিষাক্ত সামাজিক রাজনৈতিক পরিবেশে নীতি নৈতিকতা নিষ্ঠা সহ ছাত্র ইউনিয়ন করতে পারলে অন্তত একজন ভালো মানুষ হওয়া যাবে। নীতি নিষ্ঠ মানুষ হওয়া যাবে। এমন অনেক অসংখ্য খুজে পাওয়া যাবে এ বিশাল বাংলায়। দেশে বিদেশে।
ছাত্র ইউনিয়নের সম্মান মর্যাদা রক্ষায় প্রাক্তন বর্তমান সকলের নীতিনিষ্ঠ আন্তরিক ভূমিকা প্রত্যাশা করি।
বিগত ৭৩ বছরে ছাত্র ইউনিয়নের ছায়াতলে থেকে নানা ধর্মী লড়াই সংগ্রাম আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে অনেকে জীবন দিয়েছেন দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য। সুস্হ ধারার প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য। ”
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *
সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
